🚫 নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত পণ্য আমদানি তালিকা (HS Code সহ): কাস্টমস ফাঁকির শাস্তি ও অবৈধ রুট ব্যবহারের দণ্ড।
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হয় আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস আইন ২০২৩ দ্বারা। এই আইন ও নীতির অধীনে কিছু পণ্য নিষিদ্ধ এবং কিছু পণ্য নিয়ন্ত্রিত (আমদানির জন্য সরকারি অনুমোদন আবশ্যক)। এই আইনগুলি অমান্য করে পণ্য আনলে তাকে অবৈধ আমদানি হিসেবে গণ্য করা হয়, যার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
১. 📜 নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি ও নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকা
আমদানি নীতি আদেশ (Import Policy Order - IPO) অনুযায়ী, পণ্যকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
ক. সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ পণ্য (Prohibited Goods):
যেসব পণ্যের আমদানি জাতীয়, জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা ধর্মীয় কারণে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
- অস্ত্র ও বিস্ফোরক: আগ্নেয়াস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম।
- অবৈধ মাদক: হেরোইন, কোকেন, গাঁজা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য।
- আপত্তিকর উপকরণ: অশ্লীল বই, ছবি বা অডিও-ভিডিও সামগ্রী।
- গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:পপি সীড (Poppy Seed) - এটি দেখতে নিরীহ মনে হলেও, এর থেকে মাদক উৎপাদিত হতে পারে বিধায় নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ছাড়া বাদে আমদানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
খ. নিয়ন্ত্রিত পণ্য (Restricted Goods):
যেসব পণ্য আমদানির জন্য সরকারের বিশেষ অনুমোদন (লাইসেন্স, সার্টিফিকেট বা পারমিট) প্রয়োজন।
- নির্দিষ্ট রাসায়নিক ও ওষুধ: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে এমন রাসায়নিক।
- সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন পণ্য: যেমন এলএনজি (LNG) বা অন্যান্য জ্বালানি পণ্য, যা আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার অনুমোদন আবশ্যক।
- যন্ত্রপাতি: পুরাতন বা ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বিশেষ ছাড়পত্র প্রয়োজন।
২. ⚖️ কাস্টমস ফাঁকির শাস্তি ও অবৈধ রুট ব্যবহারের দণ্ড
কাস্টমস আইন ২০২৩ অনুযায়ী, মিথ্যা ঘোষণা, এইচএস কোড ভুল দেওয়া বা অবৈধ রুট ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার শাস্তি অনেক কঠোর:
- পণ্য বাজেয়াপ্ত: নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি বা শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে আনা পণ্য সরাসরি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
- অর্থদণ্ড (জরিমানা): ফাঁকি দেওয়া শুল্ক ও করের পরিমাণের সমপরিমাণ বা একাধিক গুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
- অবৈধ রুট ব্যবহারের দণ্ড: স্থল বা জলপথে নির্ধারিত কাস্টমস পোর্ট বা শুল্ক স্টেশন ছাড়া অন্য কোনো অবৈধ রুট ব্যবহার করলে পণ্য বাজেয়াপ্ত হবে এবং আমদানিকারক ও পরিবহনকারী উভয়ের উপর কঠোর শাস্তি ও জরিমানা আরোপিত হবে।
- ফৌজদারি মামলা: গুরুতর ও বারবার একই অপরাধের জন্য ফৌজদারি মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে, যা কারাদণ্ডের কারণ হতে পারে।
🚨 আমদানিকারকের দায়বদ্ধতা: কাস্টমস আইন অনুযায়ী, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সঠিক এইচএস কোড ব্যবহার এবং সত্য ঘোষণা করার মূল দায়বদ্ধতা আমদানিকারকের। কোড বা মূল্যের সামান্য ভুলে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আসতে পারে।
৩. 🧭 নিরাপদ আমদানি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার কৌশল
শাস্তি এড়াতে হলে আমদানিকারকদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে:
- IPO এবং SRO চেক: আমদানির পূর্বে আমদানি নীতি আদেশ (IPO) এবং শুল্ক সংক্রান্ত এসআরও (SRO) যাচাই করে নিশ্চিত করুন যে আপনার পণ্যটি নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত কিনা।
- সঠিক এইচএস কোড: অভিজ্ঞ কাস্টমস এজেন্টের সহায়তায় পণ্যের সঠিক এইচএস কোড এবং শুল্কহার নিশ্চিত করুন।
- পণ্য ঘোষণা: বিল অফ এন্ট্রি বা বিল অফ এক্সপোর্টে পণ্যের মূল্য, পরিমাণ এবং বিবরণ শতভাগ সঠিক হতে হবে।
- অনুমোদিত পোর্ট: পণ্য খালাস বা প্রবেশ/বের হওয়ার জন্য কেবল সরকার অনুমোদিত কাস্টমস পোর্ট বা শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করুন।
Post a Comment
0Comments