Tax Rebate Calculation — কোন খাতে কত রেয়াত পাবেন

Government Learning
By -
0
ট্যাক্স রিবেট ক্যালকুলেশন — কোন খাতে কত রেয়াত পাবেন? (২০২৫-২০২৬)

ট্যাক্স রিবেট ক্যালকুলেশন — কোন খাতে কত রেয়াত পাবেন? (২০২৫-২০২৬)

বাংলাদেশে আয়কর আইনে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়ের জন্য ট্যাক্স রিবেট বা রেয়াতের সুযোগ রয়েছে। এই গাইডে আপনি জানতে পারবেন কোন খাতে কত শতাংশ রিবেট পাওয়া যায়, কীভাবে ট্যাক্স রিবেট ক্যালকুলেট করতে হয় এবং ট্যাক্স সাশ্রয়ের সর্বোত্তম উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

📊 দ্রুত তথ্য: ট্যাক্স রিবেট ২০২৫-২০২৬

সর্বোচ্চ রিবেট সীমা: মোট আয়ের ২৫% বা সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা (যেটি কম)

মূল রিবেট এলাকা: জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, গৃহঋণ, শেয়ার বাজার বিনিয়োগ

নতুন সুযোগ: আইটি সেক্টর বিনিয়োগে অতিরিক্ত রিবেট

ট্যাক্স রিবেট কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ট্যাক্স রিবেট বা কর রেয়াত হল সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি বিশেষ সুবিধা যেখানে নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ করলে মোট আয়ের উপর থেকে সেই বিনিয়োগের একটি অংশ করমুক্ত হয়। এর ফলে চূড়ান্ত করদায় কমে যায় এবং একই সাথে সঞ্চয় ও বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ট্যাক্স রিবেটের খাতসমূহ

১. জীবন বীমা প্রিমিয়াম

১০০% রিবেট

নিজের, স্ত্রী/স্বামী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের জীবন বীমা প্রিমিয়ামের উপর ১০০% রিবেট পাওয়া যায়।

সীমাবদ্ধতা: বীমা প্রিমিয়ামের উপর রিবেট মোট আয়ের ১০% এবং মোট রিবেটের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

২. প্রভিডেন্ট ফান্ড/কোম্পানি গ্র্যাচুইটি ফান্ড

১০০% রিবেট

কোম্পানির প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড, সুপারঅ্যানুয়েশন ফান্ডে বাধ্যতামূলক এবং স্বেচ্ছায় জমাকৃত অর্থের উপর সম্পূর্ণ রিবেট।

৩. গৃহঋণ (হাউজ বিল্ডিং লোন)

সুদে রিবেট

প্রথম গৃহ নির্মাণের জন্য গৃহঋণে প্রদত্ত বার্ষিক সুদের উপর রিবেট পাওয়া যায়।

সর্বোচ্চ সীমা: বার্ষিক ২৫ লক্ষ টাকা গৃহঋণের সুদের উপর (প্রতি মাসে ২,০৮,৩৩৩ টাকা সুদ পর্যন্ত)

৪. মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট ফান্ড

১৫% রিবেট

BSEC অনুমোদিত মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ডে বিনিয়োগের উপর ১৫% রিবেট (সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত)।

৫. শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ

১৫% রিবেট

ডিপি অ্যাকাউন্টে শেয়ার/ডিবেঞ্চার ক্রয়ের উপর ১৫% রিবেট (সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত)।

৬. পেনশন সঞ্চয় স্কিম

১০০% রিবেট

বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পেনশন সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ রিবেটযোগ্য।

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ নোট

  • সব ধরনের রিবেট একত্রিত করে মোট রিবেট মোট আয়ের ২৫% বা ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হতে পারবে না (যেটি কম)
  • গৃহঋণের সুদ এবং নির্দিষ্ট কিছু খাতের রিবেট এই সীমার বাইরে গণনা করা হয়
  • রিবেটের দাবি করতে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র সংরক্ষণ করতে হবে
  • আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় রিবেটের তথ্য প্রদান করতে হবে

ট্যাক্স রিবেট ক্যালকুলেশন উদাহরণ

মোট বার্ষিক আয় নির্ধারণ

ধরি, জনাব রহিমের বার্ষিক আয় = ১২,০০,০০০ টাকা

বিনিয়োগ/সঞ্চয়ের পরিমাণ

• জীবন বীমা প্রিমিয়াম = ৪০,০০০ টাকা
• প্রভিডেন্ট ফান্ড = ৬০,০০০ টাকা
• মিউচুয়াল ফান্ড = ১,০০,০০০ টাকা
• গৃহঋণের সুদ = ১,৮০,০০০ টাকা

রিবেট যোগ্য বিনিয়োগের হিসাব

রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ = (৪০,০০০ + ৬০,০০০ + ১,০০,০০০) = ২,০০,০০০ টাকা
গৃহঋণের সুদ আলাদা হিসাব হবে

সর্বোচ্চ রিবেট সীমা পরীক্ষা

মোট আয়ের ২৫% = ১২,০০,০০০ × ২৫% = ৩,০০,০০০ টাকা
সুতরাং রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ ২,০০,০০০ টাকা সীমার মধ্যে আছে

করযোগ্য আয়ের হিসাব

করযোগ্য আয় = মোট আয় - রিবেটযোগ্য বিনিয়োগ - গৃহঋণ সুদ রিবেট
= ১২,০০,০০০ - ২,০০,০০০ - ১,৮০,০০০ = ৮,২০,০০০ টাকা

ট্যাক্স রিবেট ক্যালকুলেটর

নিচের ফর্মে আপনার তথ্য দিন এবং রিবেটের সম্ভাব্য পরিমাণ দেখুন:

আপনার ট্যাক্স রিবেট ফলাফল

ট্যাক্স রিবেট সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

খাত রিবেট হার সর্বোচ্চ সীমা শর্তাবলী
জীবন বীমা ১০০% মোট আয়ের ১০% কেবল স্বীকৃত বীমা কোম্পানি থেকে
প্রভিডেন্ট ফান্ড ১০০% কোনো সীমা নেই কোম্পানির মাধ্যমে হলে
মিউচুয়াল ফান্ড ১৫% ৫০ লক্ষ টাকা BSEC অনুমোদিত ফান্ড
গৃহঋণ সুদ ১০০% ২৫ লক্ষ টাকা/বছর প্রথম গৃহের জন্য
শেয়ার বিনিয়োগ ১৫% ৫০ লক্ষ টাকা ডিপি অ্যাকাউন্টে হতে হবে
পেনশন সঞ্চয় ১০০% ৭৫,০০০ টাকা/বছর বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত

ট্যাক্স রিবেট সম্পর্কিত FAQ

গৃহঋণের কিস্তি এবং সুদ — কোনটিতে রিবেট পাওয়া যায়? +

শুধুমাত্র গৃহঋণের সুদের অংশে রিবেট পাওয়া যায়, কিস্তির আসলে নয়। আপনার ব্যাংক থেকে প্রতি বছর একটি সুদ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে যা আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

রিবেটের জন্য সর্বনিম্ন কত বছর বীমা পলিসি থাকা প্রয়োজন? +

বীমা পলিসি কমপক্ষে ১০ বছরের হতে হবে রিবেট পাওয়ার জন্য। ১০ বছরের কম মেয়াদের পলিসির প্রিমিয়ামে রিবেট পাওয়া যায় না।

একাধিক বীমা পলিসি থাকলে সবগুলোতেই রিবেট পাওয়া যাবে? +

হ্যাঁ, একাধিক বীমা পলিসিতে মোট প্রিমিয়ামের উপর রিবেট পাওয়া যাবে, তবে মোট আয়ের ১০% এর বেশি হলে সেই অতিরিক্ত অংশে রিবেট পাওয়া যাবে না।

মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বিনিয়োগের রিবেট একসাথে নেওয়া যাবে? +

হ্যাঁ, দুটি খাতেই আলাদাভাবে বিনিয়োগের উপর রিবেট পাওয়া যায়, তবে মোট বিনিয়োগ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হলে অতিরিক্ত অংশে রিবেট মিলবে না।

ট্যাক্স রিবেটের জন্য কী ধরনের প্রমাণপত্র প্রয়োজন? +

বীমার জন্য প্রিমিয়াম রিসিপ্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কোম্পানি সার্টিফিকেট, গৃহঋণের জন্য ব্যাংকের সুদ সার্টিফিকেট, বিনিয়োগের জন্য ব্রোকার হাউসের সনদ প্রয়োজন হবে।

ট্যাক্স রিবেটের জন্য কার্যকরী পরামর্শ

ট্যাক্স প্ল্যানিং টিপস

  1. প্রথমে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ: প্রথমে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং বীমা শেষ করুন
  2. সীমা বিবেচনা করুন: মোট আয়ের ২৫% সীমার মধ্যে বিনিয়োগ প্ল্যান করুন
  3. প্রমাণপত্র সংরক্ষণ: সকল বিনিয়োগের রিসিপ্ট/সনদ সংরক্ষণ করুন
  4. গৃহঋণ সুদের সুবিধা: প্রথম বাড়ির জন্য গৃহঋণ নিলে সুবিধা বেশি
  5. পেশাদার পরামর্শ: জটিল বিষয়ে কর পরামর্শকের সাহায্য নিন

❗ মনে রাখবেন

ট্যাক্স আইন পরিবর্তনশীল। এই গাইডটি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রযোজ্য। পরবর্তী বছরে পরিবর্তন হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট বা একজন কর পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

এই গাইডটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে: নভেম্বর ২০২৫
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর আইন ২০২৫

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)