🛡️ ভুলবশত ভ্যাট পরিশোধ না করলে শাস্তি এড়ানোর কৌশল: NBR-এর 'স্বেচ্ছাপরিপালন' বিধান কী বলছে?
অসাবধানতা, আইনের ভুল ব্যাখ্যা বা হিসাবের ত্রুটির কারণে অনেক সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি সঠিক পরিমাণ ভ্যাট (মূসক) পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী, এসব ত্রুটি গুরুতর শাস্তি ও জরিমানার কারণ হতে পারে।
তবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই জরিমানা এড়াতে 'স্বেচ্ছাপরিপালন' (Voluntary Compliance) নামে একটি বিশেষ বিধান চালু রেখেছে। এই বিধানটি কীভাবে আপনার ব্যবসাকে আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করবে, তার বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
১. 📜 মূসক আইনের 'স্বেচ্ছাপরিপালন' বিধানের আইনি ভিত্তি ও শর্ত
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৮৫ এর উপধারা (২ক) অনুযায়ী, যদি কোনো করদাতা ভুলবশত কম ভ্যাট পরিশোধ করেন এবং তিনি নিজ ইচ্ছায় তা সংশোধন করেন, তবে তাঁকে শুধুমাত্র বকেয়া ভ্যাটের উপর মাসিক ২% সুদ দিতে হবে—কোনো ভ্যাট জরিমানা দিতে হবে না।
⚠️ মূল শর্ত: স্বেচ্ছাপরিপালন তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন এনবিআর কর্তৃক নোটিশ জারি হওয়ার পূর্বে বা নিরীক্ষা (VAT Audit) কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বে আপনি নিজেই এই ত্রুটি সংশোধন করবেন। অসৎ উদ্দেশ্যে ভ্যাট ফাঁকি প্রমাণিত হলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না।
২. 🛠️ ভ্যাট জরিমানা এড়ানোর কৌশল: সংশোধনের ধাপগুলি কী?
স্বেচ্ছাপরিপালনের সুবিধা নিতে হলে নিম্নোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করে মূসক পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে:
| ধাপ | করণীয় | ফলাফল |
|---|---|---|
| ১. ত্রুটি চিহ্নিতকরণ | কম পরিশোধিত ভ্যাট বা বেশি নেওয়া রেয়াত চিহ্নিত করা। | ত্রুটিটি যেন ভুলবশত হয়েছে তা নিশ্চিত করা। |
| ২. বকেয়া ও সুদ হিসাব | কম পরিশোধিত মূসকের উপর ২% সরল সুদ হিসাব করা (ধারা ১২৭)। | জরিমানা নয়, শুধু সুদ প্রযোজ্য। |
| ৩. চালান তৈরি ও পরিশোধ | বকেয়া মূসক এবং তার উপর প্রযোজ্য সুদ আলাদাভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া। | আইনি জটিলতা এড়ানো। |
| ৪. দাখিলপত্রে প্রদর্শন | পরবর্তী মাসের দাখিলপত্রে (রিটার্নে) এই বকেয়া ও সুদের পরিমাণ সংশোধনী হিসেবে প্রদর্শন করা। | স্বতঃপ্রণোদিত পরিপালন নিশ্চিত করা। |
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে, আপনার ব্যবসা ভ্যাট জরিমানা এবং ফৌজদারি মামলা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
৩. ❌ কখন স্বেচ্ছাপরিপালন প্রযোজ্য হবে না?
মনে রাখবেন, নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে এই সুবিধা পাওয়া যায় না এবং কঠোর শাস্তি অনিবার্য:
- কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে: যদি মূসক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভ্যাট অডিট শুরু করে বা নোটিশ জারি করে।
- অসৎ উদ্দেশ্যে: যদি প্রমাণ হয় যে ত্রুটিটি কর ফাঁকি বা জালিয়াতির অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তবে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া অঙ্কের সমপরিমাণ অর্থদণ্ড ও ফৌজদারি মামলা হতে পারে (ধারা ১১১)।
ব্যবসার আর্থিক স্বচ্ছতা ও মূসক পরিপালন নিশ্চিত করতে নিয়মিত হিসাব নিরীক্ষা করুন।
Post a Comment
0Comments